সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫, ০১:২৫ অপরাহ্ন

রংপুর থেকে ঢাকাগামী দূরপাল্লার বাসযাত্রীদের দুর্ভোগ বেড়েছে

রংপুর প্রতিনিধিঃ রংপুরে অঘোষিত বাস ধর্মঘট তৃতীয় দিনে গড়িয়েছে। গত দুই দিনে শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া নিয়ে বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। ফলে রংপুর থেকে ঢাকাগামী দূরপাল্লার বাসযাত্রীদের দুর্ভোগ বেড়েছে।

পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করে বেতন-ভাতা বৃদ্ধি ও সড়কে পুলিশি হয়রানি বন্ধসহ পাঁচ দফা দাবিতে ধর্মঘট শুরু করে শ্রমিকরা। মঙ্গলবার (০৫ এপ্রিল) ভোর ৬টা থেকে ধর্মঘট শুরুর ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত পরিবহন মালিক ও শ্রমিক পক্ষের মধ্যে দাবি-দাওয়া নিয়ে কোনো সমঝোতা হয়নি। বরং এই ধর্মঘট ডাকা নিয়ে রয়েছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। কোনো পক্ষই ধর্মঘটের দায় স্বীকার করেছেন না।

চলমান ধর্মঘটে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ঢাকা ও চট্টগ্রামগামী দূরপাল্লার পরিবহনের যাত্রী সাধারণ। বৃহস্পতিবার সকালে রংপুর নগরীর কামারপাড়া ঢাকা কোচ স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকরা অলস সময় পার করছেন। তাদের মধ্যে টিকিট বিক্রি নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে নেই হাঁকডাক। দুই একটি কাউন্টার খোলা থাকলেও বন্ধ রাখা হয়েছে বেশিরভাগ বাস কাউন্টার।

সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত কামারপাড়া ঢাকা কোচ স্ট্যান্ড থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি। ধর্মঘট শুরুর দিনে নাবিল, সৌখিন, এনা, আগমনী ও শাহ্ ফতেহ আলী পরিবহনের কয়েকটি বাস চলাচল করলেও আজ তা বন্ধ রয়েছে।

ধর্মঘট নিয়ে বিতর্ক ও ধোঁয়াশা থাকলেও শ্রমিকরা এর দায় নিতে রাজি হননি। তাদের দাবি পরিবহন মালিকরা বাস বন্ধ রেখেছেন। তবে কি কারণে বাস চলাচল করছে না, জানতে চাইলে কয়েকজন শ্রমিক বলেন, এটি পরিবহন মালিকদের ব্যাপার। তবে আমরা দীর্ঘ দিন ধরে বেতন বাড়ানোসহ কিছু দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হয়নি।

শ্রমিকদের অভিযোগ, ২-৩টি পরিবহনের চালকদের বেতন ১ হাজার ৯৫০ টাকা, সুপারভাইজারের বেতন ৯০০ টাকা আর হেলপারের বেতন ৮০০ টাকা দেওয়া হয়। সেখানে অন্যসব পরিবহনের স্টাফদের প্রায় এর অর্ধেক বেতন-ভাতাদি প্রদান করা হয়। এই বৈষম্য দূর করে বেতন-ভাতা বাড়ানোর পাশাপাশি সড়কে পুলিশি হয়রানি ও চাঁদাবাজি বন্ধ, বিভিন্ন সময় মামলায় আটক শ্রমিকদের মুক্তি দেওয়াসহ পাঁচ দফা দাবি তুলে তারা পরিবহন মালিকদের চাপ দিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের সেই দাবি পূরণ হয়নি। দাবি-দাওয়া বাস্তবায়নে পরিবহন মালিকসহ প্রশাসনের সহযোগিতা দাবি করেন তারা।

হানিফ পরিবহনের কাউন্টার সহযোগী লিটন মিয়া বলেন, মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে আমরা কর্মবিরতি পালন করছি। দুই দিন ধরে ঢাকায় নেতাদের বৈঠকে বসার কথা ছিল। কিন্তু বৈঠক হয়নি। আজ রাতের মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেখান থেকে হয়তো কোনো সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

এদিকে কামারপাড়া ঢাকা কোচ স্ট্যান্ড থেকে ঢাকাগামী দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও নগরীর অন্যসব জায়গা থেকে বাস চলাচল করছে। দুপুরে নগরীর মেডিকেল মোড় এবং মডার্ণ মোড় থেকে বিভিন্ন পরিবহনের আন্তঃজেলার বাসসহ বগুড়া, ময়মনসিংহ, বরিশাল, ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, নোয়াখালী, কুমিল্লার বাস চলাচল করতে দেখা যায়।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের রংপুর বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক এম এ মজিদ বলেন, বাস চলাচল বন্ধ রাখার সঠিক কারণ আমার জানা নেই। কাদের মদদে এই ধর্মঘট চলছে এটা প্রকাশ্যে আনা উচিত। মালিক পক্ষের লোকেরা পরিবহন বন্ধ রেখে যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়িয়েছে, তাদের খুঁজে বের করুন। শ্রমিকদের ন্যায্য দাবির সঙ্গে আমরা একমত। কিন্তু এই ধর্মঘট শ্রমিক ইউনিয়ন থেকে ডাকা হয়নি।

অন্যদিকে রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফতাবুজ্জামান লিপ্টন বলেন, শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বাড়ানোসহ বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছিলেন মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এম এ মজিদ। মূলত তার নির্দেশনায় শ্রমিকরা বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে। এ নিয়ে ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। সেখান থেকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com